Monthly Archives: December 2008

বিল গেটস এর বাড়িতে এক সন্ধ্যা

মাইক্রোসফট এ আমার ইন্টার্ণশীপ শুরু হয় ২০০৭ সালের জুন মাসের ১২ তারিখে। কিন্তু ইন্টার্ণশীপ অফার পাই প্রায় তিন মাস আগে। অফার পাওয়ার পরপরই ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারি যে মাইক্রোসফট এর চেয়ারম্যান বিল গেটস প্রতি বছর ইন্টার্ণদের তাঁর বাসায় একটা বার্বিকিউ ডিনার এর দাওয়াত করেন। এটা শোনার পর মনে হচ্ছিলো ইন্টার্ণশীপের চেয়ে এই ডিনারটা বেশি গুরুত্মপূর্ণ! তার উপর জানতে পারলাম এই বছরই বিল গেটস শেষ ডিনার অনুষ্ঠান করবে, কারণ পরের বছর উনি মাইক্রোসফট ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই অপেক্ষা করতে থাকলাম সেই কাংখিত দিনটির জন্য।

অবশেষে সেই বহু প্রত্যাশিত ইমেইলটি পেলাম। আমাকে অন্য সব ইন্টার্ণদের সাথে ২৮ শে জুন (যতোদূর মনে পড়ে) সন্ধ্যাবেলা মহামতি(!) বিল গেটস এর বাসায় ডিনার এর নিমন্ত্রণ করা হয়েছে! মাইক্রোসফট রেডমন্ড হেডকোয়াটার্সে প্রতি বছর প্রায় চার পাঁচ’শ ইন্টার্ণ গ্রীষ্মের ছুটিতে কাজ করতে আসে। সংখ্যাটা বড় মনে হতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে সারা পৃথিবীতে মাইক্রোসফট এর প্রায় ৯৫,০০০ এম্পলয়ী আছে, যার মধ্যে রেডমন্ড এর হেডকোয়াটার্সেই আছে প্রায় ৩৫,০০০। এক জায়গায় ৩৫,০০০ লোক কাজ করা মানে বিশাল ব্যাপার। মাইক্রোসফট এর রেডমন্ড ক্যাম্পাস ঢাকার অনেক আবাসিক এলাকার চেয়ে বড় হবে। প্রায় শ’খানেক বিল্ডিং জুড়ে এর অফিস, শ’খানেক শাটল কার দিনরাত চলাচল করে এই বিল্ডিংগুলোর মধ্যে মানুষ পারাপার করে।

যাই হোক। মাইক্রোসফট নিয়ে আরেকদিন লিখবো। আজকে বিল গেটস এর সাথে সাক্ষাতের গল্প বলি। ওই দিন বিকাল তিন টার দিকে বিল্ডিং ৩৩ এর সামনে চলে যাই। বিল্ডিং ৩৩ হচ্ছে মাইক্রোসফট এর কনফারেন্স সেন্টার। অনেকগুলো কনফারেন্স রুম আছে এখানে। বিল গেটস এর ৩০ শে জুন ২০০৮ এর বিদায়ী মিটিংও এখানে হয়েছিলো। আমার সাথে আমার দুই ইন্ডিয়ান বন্ধু ছিলো। ওরাও আমার মতোই ইন্টার্ণ। একজন রচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে আরেকজন টেক্সাস অস্টিনএ মাস্টার্স করছে। আমরা তিন জনই উইন্ডোজ নেটওয়ার্কিং গ্রুপ এ ছিলাম। তো বিল্ডিং এর সামনে অনেকগূলো বাস দাঁড়ানো ছিলো যেগুলো আমাদের বিল গেটস এর বাসায় নিয়ে যাবে। ইন্টার্ণরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্পগুজব করছে। একে অন্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে। আমাদের লাইনে অনেকের মধ্যে ক্যালটেক থেকে আসা দুই বন্ধু ছিলো যাদের সাথে আমি অনেক্ষন কথা বলেছি। একজন কম্পিউটার সায়েন্সে আরেকজন গণিতের উপর পড়ছে ক্যালটেকে। একজন এখন আমাদের গ্রুপ নেটয়ার্কিংএ, আর আরেকজন উইন্ডোজ কার্নেল গ্রুপএ ইন্টার্ণশীপ করছে। ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম মানুষ কেন ক্যালটেক এর এতো সুনাম করে। দুজনই অসম্ভব প্রতিভাবান। যে নেটয়ার্কিং গ্রুপ এর সে এর আগের বছর ইন্টার্ণশীপ করেছে গুগলএ, তার আগের বছর ইয়াহু তে! এবার মাইক্রোসফটএ এসেছে দেখার জন্য মাইক্রোসফট তার কেমন লাগে! আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনটাই তো দেখলে, কোন কোম্পানীতে কাজ করতে চাও? আমি আশা করছিলাম ও গুগল বা মাইক্রোসফট এর নাম বলবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আমাকে বললো ও একটা স্টার্ট-আপ, মানে নিজেই নতুন একটা কোম্পানী খুলতে চায়! তখন আমি বুঝলাম কিভাবে আমেরিকাতে সিলিকন ভ্যালীর জন্ম হয়। এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপকে এরা খুব দাম দেয়। এরা ঝুঁকি নিতে পারে।

সে যাক, বারবার অন্যদিকে চলে যাচ্ছি। তো একসময় আমাদের সবাইকে বাসে উঠানো হলো। বাসে ইন্টার্ণদের গল্পগুজবে একটা হাউকাউ অবস্থা। বিল গেটস এর বাসা মাইক্রোসফট অফিস থেকে খুব দূরে নয়। জ্যাম না থাকলে ১০/১২ মিনিটের ড্রাইভ হবে বড়জোর। তাই মিনিট দশেক পরে যখন বাস থেমে গেল ভাবলাম চলে এসেছি বোধহয়। বাস থেকে নেমে ভুল বুঝতে পারলাম। আমাদের আসলে নিয়ে আসা হয়েছে একটা বড় গীর্জার সামনে। অবাক হলাম। বিল গেটস এর বাসায় ডিনার খেতে যাওয়ার আগে গীর্জায় প্রার্থনা করতে হবে নাকি? আস্তে আস্তে ব্যাপারটি পরিস্কার হলো। আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে সিকিউরিটি চেক এর জন্য! গীর্জার সামনে পেছনে যেহেতূ অনেক খোলা জায়গা, তাই আমাদের এখানে লাইন ধরে মেটাল ডিটেকটর এর মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের আগেই বলে দেওয়া হয়েছিলো কোন মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা সাথে আনা চলবে না (এর চেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কী হতে পারে!)। আর এখন মেটাল ডিটেকটর দিয়ে শেষবারের মতো চেক করে নেওয়া হলো কোন ধাতব জিনিস আছে কিনা কারো সাথে।

সিকিউরিটি চেক করা শেষ হবার পর আমাদের এবার ছোট ভ্যানের (মাইক্রোবাস এর মতো) মতো গাড়িতে তোলা হলো। বিশাল সাইজের বাস যেহেতূ বিল গেটস এর বাড়িতে ঢুকবেনা, তাই ছোট গাড়ির ব্যবস্থা। গীর্জা থেকে বিল গেটস এর বাড়ী ছিলো খুব কাছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমাদের গাড়িটি বাড়ির মূল গেইট দিয়ে ঢুকে পড়লো। বাড়িটি চারদিকে গাছগাছালীতে ঢাকা। তাই তেমন কিছু খেয়াল করতে পারিনি বাড়ির বাইরের অংশের। গাড়ি থেকে নেমেই আমাদের একটা দরজা দিয়ে বিল গেটস এর বাড়িতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঢুকেই আমাদের একটা সিঁড়ি দেখিয়ে দেওয়া হয়।। কাঠের সিঁড়ি। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান থেকে সে সিঁড়ি নেমে গেছে প্রায় চার-পাঁচ তলা সমান নিচের দিকে।

Bill Gates House

সিঁড়ি বেয়ে নামা শুরু করলাম আমরা। একপাশে মূল বাড়ির ভেতরের অংশ আর আরেকপাশে একটা বিশাল ড্রয়িং রুম দেখলাম। যেহেতু আমাদের ডানেবামে কোথাও ঢুকার অনুমতি নাই, তাই সোজা নিচে নেমে যেতে হলো। নিচে নেমে দেখতে পেলাম বিশাল ঘাসে ঢাকা বাড়ির ব্যাক-ইয়ার্ড। জায়গাটা ছিলো লেক ওয়াশিংটন এর পাশে। লেক এর পাড়ে বিল গেটস এর প্রাসাদপ্রম বাড়ি। সবুজ ঘাসে ঢাকা উঠানের এখানে সেখানে টেবিল এর উপর নানা রকম খাবার রাখা। সবই আমেরিকান খাবার। আমেরিকানরা লতাপাতা (সালাদ হিসেবে) টাইপের অনেক খাবার খায় সেগুলো ছিলো, বিভিন্ন ধরণের বার্গার ছিলো, স্যান্ডউইচ ছিলো, সামুদ্রিক মাছের কিছু আইটেম ছিলো, নানারকম ড্রিঙ্কস ছিলো। আরো অনেক রকম খাবার ছিলো যেগুলোর নাম মনে নাই।

সেদিন কোম্পানীর অনেক বড় এক্সিকিউটিভরা ছিলেন সেখানে। সবাই মাইক্রোসফট এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কিংবা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বা এই গোছের কিছু। ইন্টার্ণরা কেউ কেউ খাবার নিয়ে নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছিলো, আবার কেউ কেউ কোম্পানীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের ঘিরে ধরে নানারকম প্রশ্ন করছিলো। আমি আমার ইন্ডিয়ান বন্ধুদের সাথে বসে গল্প করছিলাম। আর কয়েকজন এক্সিকিউটিভ এর কথা শুনছিলাম। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন উইন্ডোজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিভেন সিনফস্কি। ইন্টার্ণরা ওনাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলো আর উনি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। আমি কথা বলেছিলাম আমাদের কোর অপারাটিং সিস্টেম গ্রুপ এর একজন জেনারেল ম্যানেজার এর সাথে। উইন্ডোজ নিয়ে টুকটাক কথা বলেছিলাম আমরা ওনার সাথে। এদের সাথে কথা বললে বুঝা যায় এরা কতো স্মার্টভাবে একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। টেকনিকাল এবং মার্কেটিং উভয় দিকে এদের দারুন দখল।

প্রায় আধঘন্টা-পৌণে একঘন্টা পর মুল বাড়ির সাথে সংলগ্ন অপর একটি সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন বিল গেটস। আর যায় কোথায়। এখানকার বেশির ভাগ ইন্টার্ণই বিশ-বাইশ বছর বয়সের। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো তাঁর উপর। ওনার চারদিকে তৈরি হয়ে গেলো বিশাল ভিড়। প্রথমে উনি ইন্টার্ণদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিলেন। ইন্টার্ণরা দুনিয়ার সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিলো তাকে। অনেক্ষণ ওদের সাথে কাটিয়ে উনি ভিড় থেকে বের হয়ে একটু উঁচুমতো একটা যায়গায় গিয়ে মাইক এর মাধ্যমে সবাইকে স্বাগতম জানালেন। বললেন তাঁর স্বপ্নের কথা, পরিশ্রম করে মাইক্রোসফটকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার কথা। গুগলের কথা বললেন। ওরা যে সার্চএ ভালো করছে আর আমাদের জন্য যে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ সেটি বললেন। প্রায় মিনিট পনের মাইক্রোসফট সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেন।

সেদিন অনেক কাছে থেকে ওনাকে দেখেছি আর কথা শুনেছি। মাইক্রোসফট এর ব্যাবসায়ীক পলিসি নিয়ে অনেকরকম মতামত থাকতে পারে, কিন্তু “সফটওয়ার শিল্প” বলতে আমরা যা বুঝি এটা প্রায় এককভাবে মাইক্রোসফট তথা বিল গেটস এবং তাঁর টিম প্রতিষ্ঠা করেন। বিল গেটস একজন চরম প্রতিভাবান ব্যক্তি। তার ব্যাবসায়ীক এবং প্রযুক্তিগত দুই দিকেই অভাবনীয় দখল। মানবতার প্রতিও তাঁর অনেক টান। সেজন্য এই বছর তিনি মাইক্রোসফট থেকে অবসর (পুরোপুরি নয়, কিন্তু উনি এখন মূলত উপদেষ্টা ধরণের ভূমিকায় আছেন) নিয়ে মনোনিবেশ করেছেন মানবসেবায়। তাঁর বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠান। অনেকে বলছেন বিল গেটস হয়তো একদিন শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পাবেন তাঁর মানবতাবাদী কাজের জন্য। গতো বছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া তাঁর সমাবর্তন বক্তৃতার একটা মূল বিষয় ছিলো মানবসেবা।

বিল গেটস চাল-চলনে একেবারে সাধারণ। কেউই তাকে দেখে মনে করবে না কতো ক্ষমতাধর, কতো স্মার্ট উনি। সেদিন একটা সাধারণ জিন্স আর টিশার্ট পরে এসেছিলেন তিনি। তাঁর কথাবার্তা খুবই সহজসরল। এই বছর যেদিন তিনি মাইক্রোসফট থেকে বিদায় নেন, মঞ্চে সবার সামনে অনেকটা ঢুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। তাঁকে দেখেই বুঝা যায়, তিনি বাইরে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতন হলেও ভেতরে তাঁর অগাধ জ্ঞান। এই সারল্য, বুদ্ধি, আর জ্ঞানের বলেই তিনি আজ মাইক্রোসফট এর মতো এক বিশাল কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

খাওয়া-দাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আমি ঘুরে দেখেছিলাম বাড়িটি। চারদিকে সিকিউরিটির লোকজন ছিলো, তার উপর আমাদের বাড়ির ভেতরে যাবার অনুমতি ছিলো না। তাই বাইরে থেকে যতোটুকু দেখা যায় তাই দেখেছি। লেক এর পাশে বাড়ি হওয়ায় লেক এর উপর কাঠের পাটাতন ছিলো। সেখানে একটা বড় স্পীডবোট বাঁধা ছিলো। লেক এর অপর পাড়ে সিয়াটল শহরের উঁচু উঁচু বিল্ডিং এর আকাশরেখা দেখা যাচ্ছিলো। যতোদূর মনে পড়ে ওনার ব্যক্তিগত জিমনেশিয়ামটি দেখেছিলাম যেটি মূল বাড়ি থেকে বাইরে অবস্থিত। বাড়িটি আকারে বেশ বড়। অনেক টাকা খরচ করে বানানো। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়ি বলে কথা!

সব মিলিয়ে ঘন্টা দুই এর মতো থাকা হলো ওখানে। ফেরার সময় হয়ে এলো। ইন্টার্ণরা ধীরে ধীরে বের হওয়া শুরু করলো বাড়ি থেকে। এক সময় আমিও বের হলাম। আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম আমার ভাগ্যের কাছে। এমনিতে আমার সৌভাগ্য জিনিসটা পাওয়া হয়ে উঠেনা কখনো। তাই এমন একটা সু্যোগ পেয়ে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করেছি। তার উপর ওই বছরই ছিলো বিল গেটস এর শেষ ইন্টার্ণ ডিনার। এটাকে নির্দ্বিধায় বড় ধরণের সৌভাগ্য বলা যায়, কী বলেন?

ঝাপসা নীল বিন্দু

ভয়েজার ১ উপগ্রহটি ১৯৯০ সালের দিকে সৌরজগত ছেড়ে অসীম মহাশুন্যের দিকে যাত্রা শুরু করে। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে তখন ভাবা হলো উপ্পগ্রহটিতো সারা জীবনের জন্য সৌরজগত ছেড়ে চলে যাচ্ছে, যাওয়ার আগে সৌরজগৎটার কিছু ছবি তুলে নেওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। উপগ্রহটিকে পুরো উলটো দিকে ঘুরানো হলো। এরপর এর ক্যামেরা দিয়ে তোলা হলো বেশ কিছু ছবি। ছবি তোলা শেষে উপগ্রহটিকে আবার তার গতিপথে অর্থ্যাৎ মহাশুন্যের দিকে ছেড়ে দেওয়া হলো।

মজার ব্যাপার ঘটলো যখন বিজ্ঞানীরা ছবিগুলোর দিকে ভালো করে তাকালেন। বিশেষ করে পৃথিবীর যেই ছবিগুলো তুলেছে ভয়েজার ১। ছবিগুলো তোলা হয়েছিলো প্রায় চার বিলিয়ন (চার’শ কোটি) মাইল দূর থেকে। ভয়েজার ১ তখন ছিলো সৌরজগতের এক প্রান্তে। পৃথিবীর একটা ছবিটি এসেছে একটা আলোর বিন্দু হিসেবে। ন্যারো এঙ্গেল ক্যামেরা দিয়ে তোলার কারণে ছবিটাতে কয়েকটি আলোর রেখা (সূর্যের আলো থেকে প্রতিফলিত) চলে এসেছে। ওই রকম একটা আলোর সরু রেখার মধ্যে একটা অতি ক্ষুদ্র ঝাপসা নীল বিন্দু হিসেবে এসেছে পৃথিবী।

Pale Blue Dot

পৃথিবীর ওই ছবিটি সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করেছিলো বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কার্ল সাগানকে। এমনিতেই সাগান পৃথিবী আর বিশ্বজগৎ নিয়ে গবেষণা করতেন। তাই চার বিলিওয়ন মাইল দূর থেকে তোলা পৃথিবীর বিন্দুসম ছবিটি দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ১৯৯৬ সালে এক সমাবর্তন বক্তৃতায় (ওই বছরই তিনি মারা যান) তিনি পৃথিবীর ওই বিন্দুর মতো ছবিটিকে “Pale Blue Dot” আখ্যা দেন এবং খুব মর্মস্পর্শীভাবে পৃথিবীর প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন। আমি এখানে তার বক্তৃতার প্রাসঙ্গিক অংশটুকু বাংলায় তুলে দিচ্ছি।

“এই বিন্দুটির দিকে তাকান। এটা এই পৃথিবীর ছবি। এটাই আমাদের বাড়ী। এটাই আমরা। আমরা যাদের ভালোবাসি, আমরা যাদের চিনি জানি, আমরা যাদের কথা শুনেছি, সবাই এই বিন্দুতেই থাকে। সৃষ্টির শুরু থেকে যতো মানুষ বেঁচে ছিলো সবাই এই বিন্দুতেই বেঁচে ছিলো। আমাদের সারা জীবনের সব দুঃখ কষ্ট, হাজার হাজার আত্মবিশ্বাসী ধর্ম, মতবাদ, এবং অর্থনৈতিক তত্ব, যারা শিকার করেছে এবং যারা লুন্ঠন করেছে, সাহসী বীর এবং ভীরু মানুষেরা, যারা সভ্যতা সৃষ্টি করেছে এবং যারা সভ্যতা ধ্বংস করেছে, সব রাজা এবং প্রজা, সব প্রেমে মগ্ন তরুণ তরুণী, সব পিতা ও মাতা, স্বপ্নে বিভোর কিশোর কিশোরী, আবিষ্কারক এবং পরিভ্রমক, নৈতিকতার শিক্ষক, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, তারকা শিল্পী-খেলোয়াড়, মহামান্য নেতা, সাধু এবং পাপী; আমাদের মানবজাতীর ইতিহাসে যারাই বেঁচেছিলো সবাই বাস করতো ওই আলোর রেখায় ভাসমান ক্ষুদ্র ধুলাবিন্দুতে।

মহাবিশ্বের বিশালত্বের মাঝে পৃথিবীটা একটা ক্ষুদ্র মঞ্চ। কতো শত সম্রাট আর সমরনায়ক রক্তের নদী বইয়ে দিয়েছেন শুধুমাত্র এই ক্ষুদ্র বিন্দুর একটা ক্ষুদ্র অংশের বিজয়ী বীর হওয়ার জন্যে। এই বিন্দুর এক প্রান্তের মানুষেরা নৃশংসতা চালিয়ে ধ্বংস করেছে আরেক প্রান্তের মানুষদের। কী ভয়াবহ দ্বন্ধ তাদের মধ্যে, কী তীব্রভাবে একে অন্যকে হত্যা করতে চায়, কী গভীর ঘৃণা তাদের পরস্পরের প্রতি।

আমাদের নিজেদের সম্মন্ধে উঁচু ধারণা, কল্পিত অহম, এই ধারণা যে আমরা এই বিশ্বজগতে অন্য প্রানীদের থেকে বেশি মহান কোন অবস্থানে আছি – এর সবকিছু এই ঝাপসা নীল বিন্দু দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমাদের এই গ্রহ মহাবিশ্বের মহাঅন্ধকারের মধ্যে একটা নিঃসঙ বিন্দু। এই বিশাল বিশ্বজগতের মধ্য থেকে কেউ এসে আমাদেরকে নিজেদের নিজেরা ধ্বংস করা থেকে বাঁচাবে না।

এখন পর্যন্ত পৃথিবীই একমাত্র জানা জায়গা যেখানে জীবন বেঁচে থাকতে পারে। মানুষের আর কোন যাওয়ার জায়গা নেই। অন্তত নিকট ভবিষ্যতে নয়। ভ্রমণ সম্ভব, কিন্তু যেয়ে বসতি গড়া? খুব শীঘ্রই সেটি হচ্ছে না নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আমাদের ভালো লাগুক বা না লাগুক, এই মুহুর্তে পৃথিবীই একমাত্র যায়গা যেখানে আমরা জীব হিসেবে টিকে থাকতে পারি।

বলা হয়ে থাকে জ্যোতির্বিজ্ঞান মানুষকে বিনয়ী করে আর চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। চার বিলিয়ন মাইল দূর থেকে তোলা পৃথিবীর এই ছবির চেয়ে আর কিছুই সম্ভবত মানুষের অহমিকাকে এতো খাটো করে দেয় নাই। আমার মনে হয়, এটা আমাদের একজনের সাথে আরেকজনের আরো সহানুভূতি নিয়ে চলার কথা মনে করিয়ে দেয়, আরো মনে করিয়ে দেয় এই ঝাপসা নীল বিন্দুটিকে যত্ন এবং সংরক্ষণ করার কথা, যেটা আমাদের একমাত্র বাসভূমি।”

সত্যি কথা বলতে কি মূল ইংরেজীতে লেখাটির যে গভীর আবেগ ছিলো সেটা বাংলা অনুবাদের সময় পুরোটা ফুটিয়ে তোলা যায়নি। অনুবাদ নিয়ে এই সমস্যাটা প্রায়ই হয়।

সে যাই হোক। আজকের পৃথিবীর মানুষে মানুষে যে ঘৃণা আর দ্বন্ধ তার দিকে তাকালে খুবই আফসোস হয়। পৃথিবীর সব বালুকণার মধ্যে একটি কণা যেমন অতি ক্ষুদ্র তুচ্ছের মতো, তেমনি আমাদের পৃথিবী এই মহাবিশ্বের অসীম সংখ্যক নক্ষত্র আর বস্তুপিন্ডের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি বালুকণা। ঝড়, বন্যা, খরা, গ্রীন হাউজ এফেক্ট, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মাত্রারিরিক্ত জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান, পারমাণবিক বোমার হুমকি, ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি – ইত্যাদি হাজারো প্রাকৃতিক এবং মানুষের সৃস্টি সমস্যার মুখে আমাদের পৃথিবী। নিজেদের ভেতরের বানানো দ্বন্ধের চেয়ে বেশি গুরুত্মপূর্ণ এই মুহুর্তে আমাদের একমাত্র বাসভূমি এই পৃথিবীকে বাঁচানো।

ভয়েজার ১ এর তোলা ঝাপসা নীল বিন্দুটি আমাদের বিপন্ন পৃথিবীর প্রতি আরো মমতাময়ী হতে বলে, নিজেদের ভেতরের ঘৃণা কমিয়ে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে।

উইকিপেডিয়া লিঙ্কঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Pale_Blue_Dot

ইউটিউব:

Tagged ,

ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে…

আমি অন্য দেশের দেশাত্মবোধক গান তেমন শুনিনি। কিন্তু বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গান শোনার পর মনে হয় এতো সুন্দরভাবে দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা, মমতার কথা, আর কেউ বোধহয় প্রকাশ করতে পারবে না।

এই বিজয় দিবসে আমি অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান শুনছিলাম। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা, জয় বাংলা বাংলার জয়, ও আমার দেশের মাটি – প্রতিটি গানে দেশের প্রতি কী অপূর্ব মমতা! তবে যে গানটি আমি সবচেয়ে বেশি গুনগুন করে গেয়েছি সেটি হলো আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি… এ কয় দিনে গানটা অসংখ্যবার শুনেছি। ভেবে পাইনা এতো সুন্দর করে কীভাবে মা আর মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় শুধু একটি গান দিয়ে! গানটির কথা আর সুর দুটোই অসাধারণ। এই গানটির সুর অন্য অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে একটু ভিন্ন। করুণ ভাবটা নেই। একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

গানটি শোনার জন্য এখানে ক্লিক করুন

গানের কথাঃ

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।

ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ।
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।
তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি,
তোমার আঁচল ঝলে আকাশ ত’লে রৌদ্রবসনী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।

যখন অনাদরে চাইনি মুখে ভেবেছিলাম দুঃখিনী মা
আছে ভাঙা ঘরে একলা পড়ে, দুঃখের বুঝি নাইকো সীমা ।
কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ, কোথা সে তোর মলিন হাসি-
আকাশে আজ ছড়িয়ে গেলো ওই চরণের দীপ্তিরাশি!
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।

আজি দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী-
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয়হরণী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।

(কৃতজ্ঞতাঃ সচলায়তন ওয়েবসাইট)

Tagged

I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’ on

A very favorite song of mine, by Dolly Parton. Listen to it a lot these days…

***********************************************************************

Well I can’t tell you where I’m going, I’m not sure of where I’ve been
But I know I must keep travelin’ till my road comes to an end
I’m out here on my journey, trying to make the most of it
I’m a puzzle, I must figure out where all my pieces fit

Like a poor wayfaring stranger that they speak about in song
I’m just a weary pilgrim trying to find what feels like home
Where that is no one can tell me, am I doomed to ever roam
I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’ on

Questions I have many, answers but a few
But we’re here to learn, the spirit burns, to know the greater truth
We’ve all been crucified and they nailed Jesus to the tree
And when I’m born again, you’re gonna see a change in me

God made me for a reason and nothing is in vain
Redemption comes in many shapes with many kinds of pain
Oh sweet Jesus if you’re listening, keep me ever close to you
As I’m stumblin’, tumblin’, wonderin’, as I’m travelin’ thru

I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’ thru
I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’ thru

Oh sometimes the road is rugged, and it’s hard to travel on
But holdin’ to each other, we don’t have to walk alone
When everything is broken, we can mend it if we try
We can make a world of difference, if we want to we can fly

Goodbye little children, goodnight you handsome men
Farewell to all you ladies and to all who knew me when
And I hope I’ll see you down the road, you meant more than I knew
As I was travelin’, travelin’, travelin’, travelin’, travelin’ thru

I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’
Drifting like a floating boat and roaming like the wind
Oh give me some direction lord, let me lean on you
As I’m travelin’, travelin’, travelin’, thru

I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’ thru
I’m just travelin’, travelin’, travelin’, I’m just travelin’ thru

Like the poor wayfaring stranger that they speak about in song
I’m just a weary pilgrim trying to find my own way home
Oh sweet Jesus if you’re out there, keep me ever close to you
As I’m travelin’, travelin’, travelin’, as I’m travelin’ thr