“সান্সক্রীন ব্যবহার করুন” – একটি চমৎকার মোটিভেশনমূলক ভিডিও


মেরি শ্মিক (Mary Schmich) ছিলেন একজন কলামিস্ট। ১৯৯৭ সালে তিনি শিকাগো ট্রিবিউনএ “উপদেশ তারুণ্যের মতোই তরুণদের কাছে অপচয় হয়েছে” নামে একটি বিখ্যাত কলাম লিখেন। এই কলামটি পরে “সানস্ক্রিন ব্যবহার করো ” নামে ব্যাপক পরিচিত পায়। কলামটির পরিচিতি পর্বে মেরি শ্মিক লিখেছিলেন যে তাকে যদি কখনো কেউ সমাবর্তন বক্তৃতা দিতে বলতেন তাহলে তিনি তার এই কলামটি বক্তৃতা আকারে দিতেন। কলামটি প্রকাশিত হবার পরপরই এটা ইন্টারনেট এর মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এটা প্রচারিত হয়ে পড়ে যে কেউ একজন ১৯৯৭ সালের এমাআইটি (MIT) এর সমাবর্তনে এই বক্তৃতাটি দেন। আসলে এটা ছিলো একটা ভুল প্রচারণা, ওই বছর এমআইটি এর সমাবর্তন বক্তা ছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান।

আমি বক্তৃতাটি প্রথম দেখি ইউটিউবে। ভিডিওটি দেখেই আমার প্রচন্ড ভালো লেগে যায়। জীবন নিয়ে এতো উৎসাহমূলক বক্তৃতা আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি/শুনেছি। ইংরেজী থেকে অনুবাদ করার সময় প্রায় সবসময়ই ভাবটা অনেকটাই হারিয়ে যায়, কিংবা সামাজিক-সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকার কারণে আমাদের দেশের সাথে অনেক কিছুই মিলেনা, তবু মূল কথাগুলি এতো চমৎকার যে ভাবলাম অনুবাদটা করেই ফেলিঃ

১৯৯৭ সালে পাশ করা ছাত্রছাত্রীগণঃ

সানস্ক্রিন ব্যবহার করো।

সানস্ক্রিনের দীর্ঘমেয়াদী উপকারীতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু আমি যে উপদেশ দিতে যাচ্ছি সেটি আমার জীবন চলার পথে অর্জন করা
অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না।

এখন আমি আমার উপদেশগুলো দিবো।

তারুণ্যের শক্তি এবং সৌন্দর্য্যকে পুরোপুরি উপভোগ করো। তারুণ্যের শক্তি আর সৌন্দর্য্যের মূল্য তোমাদের পরিণত বয়স হবার আগে বুঝবেনা। কিন্তু বিশ্বাস করো, আজ থেকে বিশ বছর পর যখন তোমার আজকের ছবির দিকে ফিরে তাকাবা তখন মনে হবে কী প্রচন্ড সম্ভাবনা ছিলো তোমার মধ্যে, কী চমৎকার ছিলো তোমার চেহারা। তুমি নিজেকে যতোটা মোটা ভাবো আসলে তুমি ততোটা মোটা না।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে খুব বেশি দুশ্চিন্তা কোরোনা। আর দুশ্চিন্তা আসলে মনে রাখবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে বীজগণিতের অংক সমাধান করার মতো। জীবনের সত্যিকারের বড় সমস্যাগুলো কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে আসেনা, ওগুলো যখন আসে তখন তোমার দুশ্চিন্তা করার সুযোগই থাকবেনা!

প্রতিদিন একটা করে কাজ করো যেটা তোমাকে ভয় পাইয়ে দেয়।

গান গাও।

মানুষের মন নিয়ে খেলা কোরোনা, এবং যারা তোমার মন নিয়ে খেলে তাদের সংস্পর্শে থেকোনা।

দাঁতের যত্ন নিও।

অন্যের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজের সময় নষ্ট কোরো না। জীবনে কখনো তুমি এগিয়ে থাকবে, কখনো পিছিয়েঃ দিনের শেষে প্রতিযোগিতা আসলে নিজের সাথেই!

প্রশংসাগুলোর কথা মনে রেখো, অপমানের কথা ভুলে যেও। আর এটা সত্যি সত্যি করতে পারলে আমাকে জানিও কিভাবে করলে।

পুরনো প্রেমপত্রগুলো রেখে দিও। পুরনো ব্যাংক স্টেটমেন্টগুলো ফেলে দিও।

নিয়মিত ব্যায়াম কোরো।

জীবনে কী করতে চাও সেটা এখনো না জানলেও কোনো চিন্তা কোরোনা। আমার দেখা সবচেয়ে চমৎকার মানুষগুলোর অনেকেই তোমাদের বয়সে

জানতোনা তারা তাদের জীবন নিয়ে কী করতে চায়। এমনকি অনেক চমৎকার মানুষ যাদের বয়স চল্লিশ হয়ে গিয়েছে তারাও জানেনা জীবনে তারা কী করতে চায়।

বেশি করে ক্যালসিয়াম খেও। হাঁটুর প্রতি যত্ন নিও। না হলে বয়সকালে ওগুলো অনেক ভোগাবে।

একদিন হয়তো তুমি বিয়ে করবে, হয়তো করবেনা। হয়তো একদিন তোমার সন্তান হবে, কিংবা হয়তো কোনোদিন তোমার সন্তান হবেনা। হয়তো চল্লিশ বছর বয়সে তোমার ডিভোর্স হয়ে যাবে, কিংবা হয়তো একদিন তুমি তোমার পঁচাত্তরতম বিয়ে বার্ষিকী পালন করবে। যাওই করোনা কেন, নিজেকে খুব বেশি অভিনন্দিত কোরোনা, কিংবা ছোটও কোরোনা। তোমার জীবনের প্রায় সব সিদ্ধান্তই ৫০/৫০ সম্ভাবনার মাধ্যমে নেওয়া। অনেকগুলো সম্ভাব্য ঘটনার মধ্যে অন্য ঘটনাগুলিও তোমার জীবনে ঘটতে পারতো। এবং এটা সবার জন্যই সত্যি।

নিজের শরীরকে উপভোগ কোরো। যতোরকমভাবে সম্ভব ব্যবহার কোরো নিজের শরীরকে। অন্যরা কী ভাববে বা বলবে এটা নিয়ে ভেবোনা। তোমার শরীর হচ্ছে পৃথিবীতে তোমার প্রতি দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার।

নাচো। যদি কোথাও নাচার সুযোগ না পাও তাহলে নিজের ড্রয়িং রুমে কিংবা বেডরুমে একা একা নাচো।

সৌন্দর্য্য ম্যাগাজিন পড়ার দরকার নাই। ওগুলো পড়লে নিজের চেহারাকে কুৎসিত মনে হবে, যেটা কখনোই সত্যি নয়।

বাবা-মা’র সাথে ভালো যোগাযোগ রেখো। তুমি জানতেও পারবেনা ওরা কখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। তোমার ভাই-বোনদের সাথে চমৎকার
সম্পর্ক রেখো। ওরা তোমার অতীতের সাথে তোমার সবচেয়ে বড় যোগসূত্র, এবং তোমার ভবিষ্যতে ওরাই তোমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।

জীবনে অনেক বন্ধু হবে এবং হারিয়েও যাবে, কিন্তু কয়েকজন খুব কাছের বন্ধুর সাথে তোমার সবসময় একটা ভালো সম্পর্ক রাখা উচিৎ। ভৌগলিক
কিংবা সামাজিক দূরত্ব ঘুচিয়ে বন্ধুদের কাছে থেকো, কারণ তোমার যতোই বয়স হবে, ততোই তোমার চিরপরিচিত মানুষগুলোকে তোমার কাছে দেখতে মন চাইবে।

একবারের জন্য হলেও নিউ ইয়র্ক শহরে থেকো। কিন্তু এই শহর তোমার মনকে কঠিন করে দেওয়ার আগেই অন্য কোথাও চলে যেও। উত্তর
ক্যালিফোর্নিয়ায় থেকো একবার। কিন্তু তোমার মন খুব নরম হয়ে পড়ার আগেই সরে পড়ো।

নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণ কোরো।

কিছু সত্যকে চিরন্তন বলে জেনোঃ দ্রব্যমূল্য সবসময় বাড়বে; রাজনীতিবিদরা সবসময় নারীসং পছন্দ করবে; তুমিও একদিন বুড়ো হবে। এবং যখন তুমি বুড়ো হবে তখন তুমি অতীতের কথা ভেবে নস্টালজিক হবে এবং ভাববেঃ দ্রব্যমূল্য অনেক কম ছিলো; রাজনীতিবিদরা ছিলেন অনেক মহান; এবং ছোটরা বড়দের অনেক সম্মান করতো।

বড়দের সম্মান কোরো।

অন্য কেই তোমার জীবনধারণের ব্যয় বহন করবে এটা আশা কোরোনা। হয়তো তোমার জমানো টাকা আছে, কিংবা হয়তো তোমার স্বামী বা স্ত্রী
অনেক ধনী। কিন্তু এগুলো যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে।

চুল নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি কোরোনা। পরে দেখা যাবে চুল পড়ে চল্লিশ বছর বয়সেই তোমাকে পঁচাশির মতো লাগছে।

কার উপদেশ গ্রহণ করছো সেটা নিয়ে সজাগ থেকো। কিন্তু যারা উপদেশ দিতে আসেন তাদের ব্যাপারে ধৈর্যশীল থেকো। উপদেশ এক ধরণের
নস্টালজিয়া। আর অন্যকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে আসলে অতীতকে ধুয়ে মুছে, রংচং দিয়ে, ভুল অংশ বাদ দিয়ে, চকমকে করে এর প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যের হিসেবে চালিয়ে দেওয়া।

কিন্তু সানস্ক্রিন এর ব্যাপারটায় আমাকে বিশ্বাস কোরো!

One thought on ““সান্সক্রীন ব্যবহার করুন” – একটি চমৎকার মোটিভেশনমূলক ভিডিও

  1. রিজওয়ান says:

    অনেক সুন্দর অনুবাদ । ধন্যবাদ ভাই এমন একটা চমৎকার অনুবাদ উপহার দেয়ার জন্য ………

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: